প্রতিনিধি ।। আপনি কি বেঁচে রয়েছেন ?
নেতাজী ।। বেঁচে থাকলে কি হবে ?
প্রতিনিধি ।। বলেন কি ? সারা বিশ্বে হাঙ্গামা বেঁধে যাবে। তিন চারটে বিশ্বযুদ্ধ একসাথে বেঁধে যেতে পারে। সারা দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক, আধা জাতীয়, সবেমাত্র জন্মানো সকল পার্টিই একসাথে আপনার পায়ে হুমড়ি খেয়ে তাদের দলের মুখ্যমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী বানাতে পারে।
নেতাজী ।। ওরে বাবা !! তাহলে তো বলতেই হয় নিরুদ্দেশে ভালোই আছি।
প্রতিনিধি ।। কেন ? আপনি ফিরে এলে দেশের সকল সমস্যার সমাধান এক চুটকিতে ঠিক হয়ে যাবে।
নেতাজী ।। ঘেঁচু হবে। গুগলে নেতাজী লিখে সার্চ করলে আমার ছবি পরে আসে , মুলায়মের ছবি আগে আসে।
প্রতিনিধি ।। আপনি কি ফটোস্যাভি হয়ে পড়লেন ? মানে এরকম তো আপনি ছিলেন না!!
নেতাজী ।। তুমি কি আমায় হতে দেখেছ ? কি করে জানলে অম্মো অমন ছিলাম না। তাহলে আমার যে ছবিগুলো দেখতে পাওয়া যায় সেগুলো আমি নই। ভারতের যত শহীদ আছে, তাদের সকলের থেকে আমার ছবি কি কিছু কম আছে।
প্রতিনিধি ।। বরং অনেকের থেকে বেশীই আছে।
নেতাজী ।। তাহলে !!
প্রতিনিধি ।। আপনি কি বলছেন সব ছবির জন্যে?
নেতাজী ।। আমার কথা শুনে তাই মনে হল বুঝি !! আরে গাধা, যে যত বেশী কাজ করবে তার ছবিই তো তত বেশী উঠবে। হিটলারের সাথে হাত মেলাচ্ছি, আজায হিন্দে প্যারেড দিচ্ছি। প্লেনে করে এই দেশ ওই দেশ করছি। আমার ছবি উঠবে না তো কি কোনো গুপ্ত বিপ্লবীর ছবু উঠবে?
প্রতিনিধি ।। এসবের জন্যে সমালোচনাও শুনতে হয়েছে আপনাকে।
নেতাজী ।। নিশ্চয়, ওগুলোই তো আমায় তাতিয়ে রেখেছে। কেউ একজন বলল, দাদা ছেড়ে দিন, পারবেন না। ব্যস অমনি শুরু, কে বলে আহাম্মক পারব না। তোদের জাতীয় সঙ্গীত তো আমিই প্রথম চয়েস করেছিলাম। আজাদ হিন্দ বাহিনীর অনুষ্ঠানে জন গণ মন গাওয়া হয়েছিল। তারপর ১৯৫০-এ প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবসে আর কিছু খুঁজে না পেয়ে আমার সেই গানটাকেই তো জাতীয় গান করতে হল।
প্রতিনিধি ।। আপনি প্রধানমন্ত্রী হলে দেশ অন্যরকম হত। এত জোচ্চুড়ি , বেইমানি কম হত।
নেতাজী ।। তোরা সেটা মনে করিস বটে কিন্তু আমি নিজে তার গ্যারান্টি নিতে পারছি না। এই তো সেদিন ফেসবুকে দেখলাম একদল উটকো ছোঁড়া ভারতীয় নোটে আমার ছবি কেন নেই এই নিয়ে খুব ক্ষোভ দেখাচ্ছিল। এই তো তোদের চাওয়া। গেঞ্জীর প্রিন্টে আর হাজার টাকার নোটে আমার ছবি হলেই তোরা শান্তি। একদল মানুষ আবার আমার জন্মদিনকে বিশ্ব দেশপ্রেমিক দিবস বানাতে চায়। ওদের কে বোঝাবে ? দেশপ্রেমিক দিবস বলে আবার কিছু হয় না কি !! তার মানে কি বাকি দিনগুলি দেশকে প্রেম দেব না। নাকি আমি ছাড়া দেশে আর দেশপ্রেমিক নেই।
প্রতিনিধি ।। ওরা আপনাকে ভালোবাসে।
নেতাজী ।। আমাকে ভালোবাসে বলেই তো যত গন্ডগোল। ওদের উচিত ছিল দেশকে ভালোবাসা। আমি তাতে বেশী খুশি হতুম।
প্রতিনিধি ।। দেশকেও বাসে নিশ্চয়।
নেতাজী ।। কচু বাসে। যে মানুষ রাস্তায় পানের পিক ফেলে, গুটকা খেয়ে দেশপ্রীতি উদ্ধার করে, ঘুষ খায়, বউ পেটায়, ফেসবুকে নেতাজী জয়ন্তী পালন করে তাদের সবকটাকে দেশ থেকে ভাগাতে পারলে খুশি হতুম।
প্রতিনিধি ।। ভাগিয়ে দিন।
নেতাজী ।। এই তো অবস্থা। গদগদ হয়ে আমার নামে পতাকা উত্তলন করবে। দুইদিন বাদে সেই পতাকা রাস্তায় পায়ের তলায় লুটাবে। তোদের লাগে না, আমার লজ্জা লাগে। পতাকা না টানালেই তো পড়ে। গলায় মালা ফালা দেওয়া কি বিচ্ছিরি। এরা শুধু শো-অফ করতেই শিখেছে। পরিবর্তন কাকে বলে সেটাও বুঝল না, শুদ্ধিকরণ কি জিনিস সেটাও শিখল না।
প্রতিনিধি ।। গান্ধী নিয়ে কিছু বলুন।
নেতাজী ।। এটা তো তোরা নিশ্চয় হেডলাইন ব্যবহার করবি ? দেখ, গান্ধী নিজের জায়গায় একজন মহান ব্যক্তি। তার আদর্শ আলাদা, আমার পথ আলাদা। কিন্তু ব্যক্তি হিসেবে তাকে আমি শ্রদ্ধা করি। কোনো দুমুখো ব্যাপার স্যাপার নেই। কিন্তু তোদের দ্যাখ, তোরা একই সাথে গান্ধীকেও মানবি আবার আমাকেও মহান দেশনায়ক বলবি।
প্রতিনিধি ।। সেটা কি ভুল ?
নেতাজী ।। নিশ্চয়ই। হয় আমি ঠিক নয় গান্ধী ঠিক। একই সাথে আহা বীর নেতাজী , ওহো মহাত্মা গান্ধী বলে আদিখ্যেতা দেখানোর কি আছে। যে গান্ধী মানবে সে আমায় গাল দেবে, যে আমায় মানবে সে গান্ধীকে গাল দেবে। এটাই তো স্বাভাবিক। জোর করে মুখে মিচকে হাসি নিয়ে দুজনেই মহান বলার কোনো মানে হয় না।
প্রতিনিধি ।। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই তো আপনাদের দুজনকে এই দুই উপাধী দিয়েছিল।
নেতাজী ।। উপাধী দেওয়াটা ওনার একটা হবি ছিল। উনি নিজে বহু উপাধী পেয়েছেন তো তাই।
প্রতিনিধি ।। কিছু ত্যাগ-ও করেছে।
নেতাজী ।। বাহ রে বা !! দেশে যে অশান্তি হচ্ছে, সেই নিয়ে যখন দেশ জুড়ে শিল্পীরা উপাধী ত্যাগ করে তখন তোমরা তাকে হুজুগে অ্যাখ্যা দেও। আর রবীন্দ্রনাথ ত্যাগ করলেই সেই নিয়ে আদিখ্যেতা ফলাও। এই বাঙালী নাকি চায় আমি ফিরে আসি। ওরে পাগল, আমি ফিরে এলে সব থেকে অসুবিধায় পড়বে বাঙালী নিজেই। আমি সকাল ৯টায় অফিসে আনব, সন্ধে ৭টার আগে ছাড়ব না। অন ডিউটি মোবাইল হোয়াটসঅ্যাপ বন্ধ। টেবিলের নীচ থেকে ইনকাম খতম। গরীব লোককে টেবিলে বসিয়ে পাশের টেবিলের মোনিকা আন্টির সাথে রোমান্স !! মেরে হাতে দিয়ে দিতাম। ট্রাফিক পুলিশ লরির দিকে ভিক্ষের হাত বাড়ালে হাত কেটে দিতাম। স্কুল মাস্টার স্কুলে ফাঁকি দিয়ে বাড়িতে টিউশনি করালে তার বেত দিয়ে তার পিছনটাই লাল করে দিতাম। নায়িকাদের ধানাই পানাই, ও না আসলে আমার খুব ভালো বন্ধু বলা মামণিদের ... থাক ওটা একটা বিপ দিয়ে চালিয়ে নিস। আমি ফিরে এলে বাঙালী দুইদিন হেব্বি খুশী হত, পাঁচদিন পর তারা নিজের মা দুজ্ঞার মত আমায় বিসর্জন দিয়ে আসত।
রক্ত চেয়েছিলাম স্বাধীনতার জন্যে, ভারতীয়দের কান্ড কারখানায় আমার নিজের রক্ত মাথায় উঠে গেছে। রক্তচাপ প্রবল। বয়স তো কম নয়। ১১৯ হল। ইন্টারভিউ এখানেই থামা রে বাপ।
সাক্ষাতকার নেওয়ার সময় ফটোগ্রাফার অ্যালাউ করেন নি। ফটোই যখন নেই তখন কেঁপে যাওয়ার প্রশ্ন কি !!
বিশেষ ঘোষণা : যারা এখনও বোঝেননি তাদের উদ্দেশে জানাই, সাক্ষাৎকারটি কাল্পনিক। বাস্তবের সাথে সত্যি বলছি এর কোনো সামঞ্জস্য নেই। ;)