শাহরুখ খান হলেন ডন। একেবারে সাংঘাতিক যাকে বলে। অর্থাৎ একটা ছোট্ট পিস্তল নিয়ে মেশিনগানের সাথে একাই লড়তে পারেন আর কি !! বুলগেরিয়ায় ডনের অভাব পড়েছে, সেখানে সব থেকে টপ দুটি গ্যাং হল ইন্ডিয়ানদের তৈরী, কে বলে ভারতীয়রা বিদেশের মাটিতে উন্নতি করতে পারে না!! যেহেতু রোহিত শেট্টি তাই কার চেজিং তো থাকবেই, এখানেও আছে। শত্রুপক্ষের ধাওয়া খেতে খেতে শাহরুখ খানের গাড়ি ধাক্কা মারে কাজল ম্যাডামকে। এখানে নায়কের নাম কালি। নায়িকা মীরা। ধাক্কা থেকে প্রেম এবং প্রেম থেকে আবার ধাক্কা। কিছুদিনেই জানা গেল কাজল আসলে দুশমন গ্যাং-এর মেয়ে। দুশমন গ্যাং-এর মালিকের নাম মালিক। আজ্ঞে হ্যাঁ। মালিকের নাম মালিক। ঐ ডন ডন ব্যাপার আর কি !!
অতঃপর আর কি !! সেই বিখ্যাত ডায়লগ - ‘মীরা, আজকে বাদ মুঝে আপনি সকল মত দিখানা’। সকল অবশ্য পরদিন সকালেই দেখতে হল এবং মামুণি রাগ ভাঙ্গাতে এসে নিজেই গোসা করে সন্ধ্যে অবধি খালি পেটে খোলা আকাশের তলে বসে রইলেন। দিলওয়ালেকে যেই মেয়ে আগের দিনে থুড়ি আগের সিনে গুলি মারতে মারতে প্রাণ ভিক্ষা দিয়ে এসেছিলেন, তার জন্যে ছাতা হাতে কালি এসে হাজির। চোখের জলে পুনরায় প্রেম প্রতিষ্ঠা হল। বরফের দেশে, কখনও বা সবুজের মাঝে আবার ভাঙ্গা প্লেনে গেঢ়ুয়া গেঢুয়া খেলাও হল।
এই বার নিজের নিজের বাবাদের কে জানানো হল। এক বাবা অলোক নাথ তো অন্য বাবা অমরিশ পুরী। দুই গ্যাং-এ বেশ খানিক গ্যাঙ্গর গ্যাং চলল। এবং প্রায় লক্ষ খানেক গুলি থেকে বাবু দিলওয়ালে বেঁচে ফিরলেও তাদের বাবারা স্বর্গবাসী হলেন। মীরাকে ভুল ইনফো দেওয়া হল যে শাহরুখ এবং তাদের দলের লোকেরাই বেইমানি করেছে। যাই হোক, কাজল তো এমনিতেই হট, তার উপর এসব দেখেই নো ওয়ারেন্ট নো অ্যারেস্ট সিধা শাহরুখের বুকে দড়াম করে গুলি চালিয়ে দিল। এই রে !! দড়াম শব্দই হয়েছিল কিনা সঠিক শুনিনি, আসলে নেট থেকে পাইরেটেড কপি ডাউনলোড মেরে সমালোচনা কপচাচ্ছি তো, তাই খানিক ফাঁক থেকে গেল।
এতো গেল গল্পের গাছ। এবার গরু আসছে সেথায় চড়বে বলে। শাহরুখের একটা ভাই আছেন। ঐ কভি খুশি কভি গম টাইপ। আসলে তিনি নিজে ছিলেন কুড়িয়ে পাওয়া সন্তান, তার ভাইটি অবশ্য তার বাবার নিজের। যদিও অত বুড়ো বাবার অত খোকা টাইপ নিজ-পুত্র কোথা থেকে হয় সেটা বলা নেই। না, হতে যে পারে না সেটাও বলছি না। সেই ভাইকে নিয়ে এবং সাঙ্গ পাঙ্গ নিয়ে শাহরুখ সোজা ইন্ডিয়ায়। এখানে তার একটি গ্যারাজ আছে। এবং নীল-সাদা রঙের বাড়ি আছে (কে বলে শাহরুখ বাংলার অ্যাম্বাসাডার নন!!)। তিনি দিনে ভালো মানুষ এবং রাতে শাহেনশাহ হয়ে ওঠেন। মানে গ্রীষ্মকালের রাতে রেইনকোট পরে তোড় দে কালি, দুশমন কি নালি-র মত সমাজ সংস্কারক কাজ করে থাকেন। বর্তমানে তার নাম রাজ। নাম পাল্টানোর কারণটি পরিষ্কার নয়। হয়ত ‘নাম তো শুনা হি হোগা’ কে জাস্টি‘ফাই’ করতে ডিরেক্টর এই ‘ফরমাশ’টি করেছেন।
সেই ভাই এখন তগড়া জওয়ান। ইশিতার প্রেমে ঘ্যানঘ্যানান। সকলকে বিন্দুমাত্র অবাক না করেই দেখা যায় ইশিতা আসলে সেই কাজলেরই বোন। ফুল মনমোহন দেশাই টাইপ মেলোড্রামা। দেশাই বাবু দু’য়ে দু’য়ে চার করতেন, শেট্টি বাবু চারে চারে আচার করেছেন। অতঃপর এই খোকাখুকি মিলে পুরানো প্রেমিক জোড়িকে আবার এক করার চেষ্টায় উঠে পরে লাগেন। হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন, খানিক কুছ কুছ হোতা হে-র বাসি গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। শেষমেশ যা হওয়ার তাই হল। দুই শত্রু যারা আগে প্রেমিক প্রেমিকা ছিল পরে শত্রু হয়ে আবার প্রেমিক প্রেমিকা হয়ে আবার শত্রু হয়েছিল তারা আবার পুনরায় ... খামোশ !! ওরে বাবা পুরো ঘেঁটে গেল। মোদ্দা কথা হল, শেষে একটা গোলাগুলির ব্যাপার আছে। হিসেব বরাবর করার জন্যে কাজলের একটা গুলি খাওয়া বাকি ছিল, সেটাও লাস্ট সিনে মিটিয়ে দেওয়া হয়। এভাবে অঙ্ক মিলে যাওয়ার পর প্রায় ২ ঘন্টা ৩৩ মিনিট ধরে আপনার মাথা খেয়ে তেনারা শান্ত হন। বড়ে বড়ে দেশো মে অ্যায়সি শেট্টি শেট্টি বাতে হোতি রহতে হে।
মোটের উপর এন্টারটেইনমেন্ট কম ছিল না। জনি লিভারের উইটি পাঞ্চ লাইন গুলো ভালো। কাজলকে দেখতে ভালো লেগেছে। অ্যাকশন বেশ ভালো। লোকেশান মন্দ নয়। হাসির সিনে হাসি পেতেও পারে, নাও পারে; তবে সিরিয়াস দৃশ্যে ভুলেও হাসবেন না। ষোলো বছরের কচি মন নিয়ে দেখতে বসলে ষোলোকলা পূর্ণ হবে। তিরিশের ঘুঘু মালদের জন্যে উপাদেয় নয়, তারা হেট স্টোরী থ্রী-র দিকে চোখ ফেরাতে পারেন।
যারা পুরোটা পড়লেন এবং কাহিনীর কিছুটা আন্দাজ পেলেন তাদের অশেষ ধন্যবাদ। নিচে কমেন্ট বক্স রয়েছে সেখানে কমেন্ট দিয়ে নিজেদের সময় নষ্ট করবেন বলে ভাবছেন কি ??
একটি খারাপ মেয়ে (shortfilm)
চিত্রনাট্য ও পরিচালনা
- প্রবীর কুন্ডু